Subscribe Us

এক চিমটি স্বপ্ন | #২ আগামী এক মাসের জন্য আমার সাথে প্রেম করবেন?

আগামী এক মাসের জন্য আমার সাথে প্রেম করবেন?  - কথাটা শুনে তারন্য কিছু সময় রুহীর দিকে তাকিয়ে থাকলো।  অফিসের বস,  যে কিনা সকলের কাছে পাথরের মূর্তী নামেই পরিচিত,  কাজ সফলতা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না তার মুখে এমন কথা শোনা অনেক টা অমাবস্যার রাতে পূর্নিমার চাঁদ  দেখার মতো ।  
" আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ম্যাম।  
" আপনি কি আগামী এক মাসের জন্য আমার বয়ফ্রেন্ড হবেন?  
" হঠাৎ আপনার প্রেম করার ইচ্ছে জাগলো কেন?  
" সবাই বলে আমার নাকি ইমোশন নেই প্রেম করলে নাকি মনে ইমোশন সৃষ্টি হয় তাই আমি দেখতে চাই প্রেমের মাঝে এমন কি আছে। 
" ওহহ আচ্ছা ।  কিন্তু এটার জন্য আপনি আমাকেই কেন বেছে নিলেন।  
" আমাদের কলিগদের মাঝে আপনি একমাত্র হ্যান্ডসাম আর স্মার্ট,  বাকীদের তো মেদ দুজনের জায়গায় নিয়ে নিছে।  আপনার তো আবার কোনো প্রেমিকা নেই?  
তারন্য হেসে বললো- না,  না,  আমার তেমন কোনো সমস্যা নেই ।  কিন্তু প্রেম কিভাবে করে সেটা তো আমি জানি না।  
" তাহলে তো সমস্যা ,  আপনিও নতুন আমিও নতুন ।  
" হুম ।  এর থেকে ভালো হবে আপনি এমন কাউকে  বেছে নেন যার অভিজ্ঞতা আছে ।  
" এটা ঠিক বলছেন ।  
" আমি তাহলে আসি।  
" হুম ।। 

তারন্য মুচকি হাসছে,  ম্যামের মাথা গেছে ।  ইমোশন সৃষ্টি করার জন্য নাকি প্রেম করতে হয়।  
সারাদিন আর তারন্য রুহীর কেবিনে যায় নি।  
রুহী বাবার একমাত্র মেয়ে।  বাবার ব্যাবসার হাল ধরছে ।  প্রেম ভালোবাসা বিয়ে এই শব্দ গুলো তার অভিধানে নেই বললেই চলে ।  সারাদিন আছে শুধু ফিউচার নিয়ে ।  

পাঁচটায় অফিস ছুটি হওয়ার পর তারন্য কিছু সময় বাস স্টান্ডে  দাঁড়িয়ে থাকলো।  কিন্তু দেশের বর্তমানে যা অবস্থা বাসও সময় মতো পাওয়া যায় না।  আবার যখন দরকার থাকবে না তখন একসাথে তিন চারটা থাকবে ।  গত কালই একটা ভীর বাসে গাদাগাদি করে উঠছে তারন্য কিছু দূর যাওয়া পর পিছনে একে একে দুটো ফাঁকা বাস চলে গেলো।  তখন তারন্য বলে- ভাগ্য ফুটো হলে যা হয় আর কি।  
তার এই ভাগ্য ফুটো কথাটা কম বেশি সবাই শুনেছে ।  কিন্তু এর আসল মানে টা এখন পর্যন্ত সবারই অজানা।। 

কিছুদূর যেতেই মেঘের কান্না শুরু হলো ।  ভিজতে ভিজতে কোনো রকমে একটা ছাউনির নিচে জায়গা পেলো তারন্য ।  জায়গাটা অবহেলায় অযত্নে পড়ে থাকলেও বিপদের সময় প্রায় পাঁচ ছ জন কে অনায়াসে ঠাই দিয়েছে ।  
সেখানে থাকা সবাইকে সিগারেট খেতে দেখে তারন্য মোবাইল টা একটা পলিথিনে মুড়িয়ে পকেটে রেখে  বের হয়ে আসলো। বাঙালির বদ অভ্যাস বৃষ্টি দেকলেই যত নেশা আছে সব জেগে ওঠে।  তবে পুরুষের আবার সিগারেটের নেশা খুবই।   সিগারেটের ধোঁয়া ছেলেটা সহ্য করতে পারে না।  তাই মেঘের কান্নায় বৃষ্টি বিলাসী হয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো।  
কিছুদূর এসে একটা কুকুর কে জড়সড় হয়ে একটা ছাউনির এক কোনায় বসে থাকতে দেখে তারন্য দাঁড়িয়ে পড়লো।  - কি রে,  তোরও কি জ্বর সর্দি হবার ভয়?  আচ্ছা তোদের ও কি জ্বর সর্দি হয়?  হয় হয়তো ।  তাই বলে মেঘের কান্নায় ভিজে তাকে একটু সান্ত্বনা দিবি না?  এটাই কি তোদের মানবতার উদাহরণ?  ধুর ছাই!  তোরা তো কুকুর তোদের আবার মানবতা থাকবে কি করে?  আমিও না ( মুচকি হাসে তারন্য)  
কুকুরটা তারন্যের দিকেই তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে তার সব কথা সে বুঝতে পায়।  
- আচ্ছা একটা কথা বলতো,  আমাদের মানব সভ্যতার মতো তোদের ও কি কুকুর সভ্যতা আছে?  
সেই সময় কুকুর টা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।  
কিছুটা রাগ আর অভিমানে বলে তারন্য - মুখ ফিরিয়ে নিবিই তো।  তোরাও মানুষের মতোই সারাদিন বাতেলা দিবে যখনই মানবতা বা সভ্যতার কথা আসবে মুখ ফিরিয়ে নিবে।  

তারন্য হাঁটা শুরু করলো ।  একটু আগাতেই একটা কালো রঙ্গের গাড়ি এসে তার পাশে থামলো। গাড়িটা খুবই পরিচিত।  রুহী ম্যামের গাড়ি ।  প্রতিদিন দেখি ড্রাইভার কত যত্ন করে গাড়িতে মাস্কা লাগাচ্ছে ।  
 গ্লাস টা নামিয়ে ভিতরে থেকে আওয়াজ আসলো- একি আপনি ভিজছেন কেন?  ভিতরে আসুন ।  
" মেঘের সঙ্গ দিচ্ছি ।  
" মানে?  
" মানে বৃষ্টি উপভোগ করছি।  
" আপনি ভিতরে আসুন তো।  
" আমার পুরো শরীর ভেজা।  ভিতরে গেলে সমস্যা হবে ।  এর থেকে আপনি চাইলে আমার সাথে বৃষ্টি ভেজার মজাটা উপভোগ করতে পারেন ।  
অন্য দিন রুহী ম্যামের দিকে তাকিয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারতো না তারন্য ।  কিন্তু আজ সে তাকে বৃষ্টি ভেজার আমন্ত্রণ জানালো।  বৃষ্টি কি তার সাহস বাড়িয়ে দিলো?  
তারন্য হাঁটছে।  হঠাৎই খেয়াল করলো পাশে রুহীও তার সাথে হাঁটছে ।  
" ব্যাস্ত শহরটা দেখুন না একবার কেমন অচেনা লাগছে না?  
" হুম ।  কিন্তু আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন?  
" আনন্দ পাই।  নিজেকে নতুন করে জানার এটা একটা সুযোগ।  
" ওহহ।  
" পায়ের জুতো খুলে হাঁটুন অনেক ভালো লাগবে ।  

রুহী একবার পায়ের দিকে তাকালো এরপর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারন্য বললো- আমি খুলে দিচ্ছি।  

ব্যাস্ত শহরের রাস্তার পাশে একটা ছেলে একটা মেয়ের পায়ের জুতো খুলে দিচ্ছে ।  বিষয়টা কতকিছুই না বলে যায়,  রোমান্টিক,  দায়িত্ব,  হেও।  যার মানসিকতা যেমন।  

একজোড়া সুখের পায়রা ব্যাস্ত শহরের ফাঁকা রাস্তায় জুতো হাতে হেঁটে যাচ্ছে।  
" কেন যে আপনার কথায় বৃষ্টি ভেজার জন্য আসলাম ।  এখন আমায় জুতো হাতে করে হাঁটতে হচ্ছে ।  
" খারাপ লাগছে কি?  

বৃষ্টির ফোঁটা গুলো পায়ের মাঝে পড়ছে আর রাস্তায় পিচ ঢালা পাথর গুলো কেমন জানি সুড়সুড়ি দিচ্ছে পায়ের নিচে ।  অনুভূতি খারাপ না।  এমন সুন্দর একটা অনুভূতির জন্য মাঝে মাঝে বৃষ্টি ভেজার দরকার ।  
রুহী তারন্য কে এটা নিয়ে আর কিছু বললো না।  
" আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?  
" বলুন 
" আমি নাহয় একটু রোবট ধরনের তাই প্রেম করি নি।  কিন্তু আপনি প্রেম করেন নি কেন?  
" আমি প্রেম করতে চাই নি কখনো আর চাইবো ও না।  
" কেন?  
" আমি ভালোবাসতে চাই ।  নিদিষ্ট একজন মানুষকে অনিদিষ্ট কালের জন্য ভালোবাসতে চাই ।  
" তো সেই মানুষ টা কেমন হবে শুনি?  
" আপনার পায়ে কালো একটা রাবার পড়া উচিত।  যাতে কারো নজর না লাগে ।  ( খুবই স্মুথলী কথার মোড় ঘুরিয়ে দিলো তারন্য ।)  

রুহী তারন্যের দিকে তাকিয়ে আছে,  এর আগেও অনেক বার এমন হয়েছে সে কিছু একটা কথা বলছে কিন্তু তারন্য সেটার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।  যেটা তার পছন্দ নয় সে সেটা নিয়ে কথা বলে না।  

এরপর চুপচাপ,  
" আপনার বাসায় যাওয়ার রাস্তা এসে গেছে।  
এতো তাড়াতাড়ি এতটা পথ এসে গেলো রুহী ভাবতেই পারে নি।  
" চলেন আমার বাসায়।  
" সামনেই আমার বাসা।  অন্য দিন যাবো।  
" বাসায় কে কে আছে আপনার?  
" আপনার ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।  আসি আমি আমার জন্য অপেক্ষা করছে অনেক কিছু ।  
" আপনাকে বাসার সবাই অনেক ভালোবাসে তাই না?  
" হয়তো বাসে নয়তো নয় তবে আমার জন্য অপেক্ষা করে।  পৃথিবীর নিয়ম বড়ই অদ্ভুত নতুনের আগমনে পুরাতনের মূল্য সব সময় কমে যায়।  তাদের কাছেও আমি ঠিক তেমন।  
" আমার প্রস্তাব টা নিয়ে কি কিছু ভাবলেন?  

তারন্য কি শুনেছে?  
হয়তো শুনেছে নয়তো নয়।  কিন্তু সে আর তাকায় নি।  হাঁটছে তার একাকীত্বের নীড়ে।  

এক চিমটি স্বপ্ন 
FTBANGLA
২য় পর্ব

Post a Comment

0 Comments