#ভালোবাসার_পরশ
#পর্ব_০১
নিচে গিয়ে সবার সাথে ছেলের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
অন্যদিকে,
আদ্রিজা রুমের দরজা লাগিয়ে কাঁদছে।
আদ্রিজা একমাস আগের কথা ভাবছে।আয়মান ভাইয়া যেদিন প্রথম বিদেশ থেকে আসে ওইদিনই আয়মানকে দেখে সে ক্রাশ খায়।ওইসময় সে দুষ্ট টাইপের ছিল তবে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে শান্ত হয়ে গেছে।সারাদিনই আয়মানের সাথে ফাজলামো করতো আর আয়মান রাগ দেখাতো।সে কখনো ভাবে নাই আয়মান তাকে ভালোবাসে।কারণ আয়মানের আচরণে,ব্যবহারে তা প্রকাশ পায়নি।
আদ্রিজাঃকেনো আমার সাথে এমন হয়।এ কে তো এতিম তার উপরে নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাবো না।হ্যাঁ আমিও আয়মান ভাইয়াকে ভালোবাসি।তবে তা আমি প্রকাশ করবো না কারণ মামা-মামি আমার জন্য যা করছে তাদের আমি ঠকাতে পারবো না।
চোখের পানি মুছে ফেলে।
আমি তো বরকে খুঁজছি।বেটাকে পেয়েও গেছি।
আমিঃএই যে রাফিন তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
রাফিনঃজ্বী ভাইয়া বলেন।
আমিঃতুমি আমাকে চিনো?
রাফিনঃহুম যেইদিন আদ্রিজাকে দেখতে গেছিলাম ওইদিন আপনার বাবা বলেছিল।তবে কথা হয়নি।
আমিঃওহ্।আচ্ছা তুমি আমার সাথে আসো কিছু কথা আছে।আদ্রিজাকে তো বিয়ে করছো ওর বিষয়ে সবকিছু জানার অধিকার আছে।
রাফিনঃহুম ভাইয়া বলেন।
আমিঃআদ্রিজা তেমন ভালো মেয়ে না।অনেকগুলা বয়ফ্রেন্ড আছে।তার উপর অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে।এতো রাত পর্যন্ত কি করে আল্লাহ জানে।ড্রিংকসও করে।
রাফিনঃকি বলেন ভাইয়া?এগুলা সত্যি?
আমিঃআমি কি মিথ্যা বলতে পারি।
রাফিনঃভাইয়া আমারও না গফ আছে।তবে ওর মতো ওতো গুলা না একটা।আব্বুর ভয়ের বিয়েতে রাজি হইছি।
আমিঃওরে বদমাইশ।প্রেমিকা থাকতে একদম পিউর সিঙ্গেল মেয়ে রে বিয়ে করবে কত সাহস! (মনে মনে বললাম)
কি বলো তা এক কাজ করো।কিছু করার দরকার নেই।কালকে বাবাকে আদ্রিজার ব্যাপারে সব বলবে আর নিজের গফের সাথে বিয়েটা ঠিক করে ফেলবে।আর আজকে কিছু বলা লাগবে না।একদম বিয়ের আগে কল করে জানাবে।
রাফিনঃওকে ভাই আপনার কথা মতো সব হবে।তবে আজ জানালে কি হবে?
আমিঃআরে বোঝ না কেনো?আজ জানালে কি শাস্তি দেওয়া যাবে?ওর তো একটা শাস্তির দরকার তাই কাল বিয়ের আগে জানাবে।
তারপরে কিছুক্ষণ ওদের বাসায় থেকে আমাদের বাসায় চলে আসলাম।আদ্রিজার হলুদ।
আম্মুঃকি রে আদ্রিজা তোর হাতে কি হয়েছে?
আদ্রিজা কি বলবে বুঝতে পারছে না।
আম্মুঃকি হলো বল মা?
আদ্রিজাঃআসলে মামি হাতে বারি খেয়েছি দেয়ালে।
আরমানঃকি বলো ভাইয়া আর তুমি একসাথে বারি খেলে কিভাবে?দুজনে কি আবার মারামারি করছো?
আদ্রিজা চুপ হয়ে আছে।
আম্মুঃকি বলিস আয়মানেরও হাতে ব্যান্ডেজ?
আমিঃআম্মু তেমন কিছু না।আদ্রিজা পড়ে যাচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে ও কে ধরতে গিয়ে আমি ব্যাথা পাইছি আর ওর হাতও দেয়ালের সাথে লেগে কেটে গেছে।
আম্মুঃকিন্তু আদ্রিজার তো আজকে রাতে মেহেদি পড়তে হবে।
আমিঃমেহেদি না পড়লে কি সমস্যা?
আম্মুঃচুপ কর।বিয়েতে মেহেদি না পড়ালে হয় নাকি?
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম।ছাদে এসে বসে আছি।সব কিছু করে আসছি তারপরও ভয় হচ্ছে।নিচে আদ্রিজার হলুদ একবারও যাই নাই।
একটু পরে ছাদে কারো উপস্থিতি টের পেলাম।পিছনে ফিরে দেখি আদ্রিজা।হলুদ শাড়ি,মাথায় খোঁপা করে ফুল বাঁধা,মুখে হালকা হলুদ লেগে আছে।তবে অন্ধকারে তেমন ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু একটা জিনিস ভালোভাবে বুঝতে পারছি আদ্রিজার চোখে জল।চাঁদের আলোয় চোখের পানি চিকচিক করছে।
আমি আদুর সামনে গিয়ে দাঁড়াই।
আমিঃতুই এখানে কি করছিস?
আদ্রিজাঃনিচে ওতো হাসাহাসি,চিল্লাচিল্লি ভালো লাগছিল না তাই ছাদে আসছি।তবে তুমি এখানে আছো তা জানতাম না।
আমিঃকি বলিস তোর হাসাহাসি ভালো লাগে না?আগে তো সারাদিন হাসাহাসি,চিল্লাচিল্লি করতি।
আদ্রিজাঃসব সময় মানুষ এক রকম থাকে না।
আদ্রিজাকে টান নিজের কাছে নিয়ে আসলাম।ওর গালের সাথে গাল ঘষিয়ে ওর গালের হলুদ আমার গালে লাগাচ্ছি।
আদ্রিজা চোখ বন্ধ করে আছে।ওর শরীর শীতল হয়ে গেছে।আয়মান এতোটা কাছে।আয়মানের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলা ওর গালে লাগছে আর ও কেঁপে কেঁপে উঠছে।
আমি আদ্রিজাকে ছেড়ে দি।
আমিঃবাহ্ তুই তো ভারী লুচু আছিস?কাল বিয়ে আর আজকে অন্য ছেলের গালে গাল ঘষছিস।
আদ্রিজাঃকি আমি লুচু?তুমি নং ১ লুচু।নিজেই তো আমার কাছে আসছো।😾
আমিঃআহা রাগ করিস কেনো আমি তো মজা করছি আর শোন তোকে আমি ভালো-টালো বাসি না।শুধু শুধু মজা করছি।(আদ্রিজাকে একটু কষ্ট দেওয়ার জন্য বলছি।ও বিয়েতে রাজি হইছে তার শাস্তি।আমি ভালো করেই জানি ও আমাকে ভালোবাসে)
আদ্রিজার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ও কিছু না বলে নিচে চলে গেল।আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছি।
আমিঃমাই ডিয়ার হবু বউ।তোমাকে একমাত্র আমার সাথেই মানায়।আর কারো সাথে না।
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সৃষ্টিতে দেখবেন]
0 Comments