সুন্দরবন
সুন্দরবনে দর্শনীয় স্থান:
সবুজে ঘেরা সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হলো করমজল, কচিখালী, কটকা, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচর ও আলোরকোল। এই স্পটগুলি প্রতি পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। মংলা থেকে মাত্র ১ থেকে দেড় ঘন্টায় যাওয়া যায় সুন্দরবনের করমজলে। এখানে বনবিভাগ কুমির প্রজনন খামার ও মিনি চিড়িয়াখানা তৈরি করেছেন। কচিখালীতে আছে সুন্দরবনের অপর সৌন্দর্য্যরে হাতছানি। ভ্রমন পিপাসুদের জন্য কচিখালী হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এর পর কটকা ও হিরণপয়েন্ট। এই ৩টি পয়েন্টে মংলা থেকে ট্রলারে করে পৌছাতে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা সময় লাগে। বনের কটকাতে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ারে উঠে এক নজরে দেখে নেওয়া যায় অপূর্ব সুন্দর সুন্দরবনকে। এর চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে পৌছানো যায় দুবলারচর ও আলোরকোল। আলোরকোল পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। এখান থেকে সূর্য্য উদয় ও অস্তের দৃশ্য দেখার জন্য ভ্রমন পিপাসুরা ভীড় জমায়। যেন পানির ভেতর থেকে সূর্য্য উঠে আসে আবার ডুবে যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য সবাইকে হাতছানি দেয়। দুবলারচরে গেলে দেখা যাবে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অস্থায়ী জেলে পল্লী। হাজার হাজার জেলেরা ঝড় ও জলোচ্ছাসের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছেন এই চরে ।
কি আছে এই সুন্দরবনে:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত জীববৈচিত্র্যে ভারপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ‘সুন্দরবন’।
এটি খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। এর পশ্চিমে রয়েছে হাড়িয়াভাঙ্গা, রায়মঙ্গল ও কালিন্দি নদী। দক্ষিণে আছে বঙ্গোপসাগর, উত্তপ্ত ছোট নদী, খাল এবং জনপদ ও পূর্বে ধলেশ্বরী নদী। অনৈকের মতে প্রচুর সুন্দরী গাছ জন্মে বলেই এর নাম সুন্দরবন হয়েছে।
এই বন বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.২ ভাগ এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪ ভাগ। বনের মোট আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার (সমগ্র সুন্দরবনের ৬৮.৮৫ ভাগ) এবং জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার (সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ)।
এই বনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুর, কাকড়া, গরাণ, গোলপাতা, হেতাল, ঝানা, আমুর, সিংড়া, খলসীসহ বিভিন্ন জাতের গাছ ও ঘাস জন্মায়। এছাড়া সুন্দরবনে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, অসংখ চিত্রল হরিণ, বানর, শুকুর, গুইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন সাপ, পশু, পাখি। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ছোট-বড় নদ-নদী ও খাল-বিলে আছে কুমির, হাঙ্গরসহ প্রায় ২১০ প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।
সুন্দরবনে প্রায় ৪৫০ টি নদ-নদী ও খাল রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান নদীগুলো হলো-পশুর, শেলা, শিবসা, ভদ্রা, যমুনা, রায়মঙ্গল, ভোলা, মরজাত, আডুয়াশিবসা, বলসহ ইত্যাদি। প্রধান খালগুলো হলো-শাপলা, মরাভোলা, কটকা, বাদামতলা, মৃগামারি, করমজল, জোংড়া, হরিণটানা, মরাপশুর, নন্দবালা, ধানসাগর, নিশানখালীসহ ইত্যাদি। সুন্দরবনের প্রধান চরগুলোর মধ্যে আছে-দুবলার চর, ডিমের চর, কালির চর, তিন কোনার চর, পক্ষীর চর, শেলার চর, পুতনির চরসহ ইত্যাদি।
সুন্দরবনে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল এবং ১৩ প্রজাতির অর্কিড জন্মায়। এর মধ্যে সমগ্র প্রায় ৭৩ শতাংশ গাছই সুন্দরী।
সুন্দরবনে প্রায় ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। ইতোমধ্যেই সুন্দরবন থেকে ১ প্রজাতির বন্য মহিষ, ২ প্রজাতির হরিণ, ২ প্রজাতির গন্ডার এবং ১ প্রজাতির মিঠা পানির কুমির বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টি বাঘ, ১ থেকে দেড় লাখ হরিণ, ৪০ থেকে ৫০ হাজার বানর, ২০ থেকে ২৫ হাজার বন্য শুকর, ১৫০ থেকে ২০০ কুমির এবং ২০ থেকে ২৫ হাজার উদবিড়াল।
বন হলেও সুন্দরবনের ৩৯ নং কম্পার্টমেন্টে রয়েছে বহু পুরাতন পুরাকীর্তি। এছাড়া সুন্দরবনের অন্যান্য এলাকাতেও রয়েছে অনেক পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ।
যেভাবে আসতে হয় সুন্দরবনে: ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলি থেকে গ্রীন লাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ,কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। ভাড়া এসি ৬৫০ থেকে ৭৫০ এবং ননএসি ৩৮০-৪০০ টাকা। খুলনা নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মংলা যাওয়া যাবে। এছাড়া সায়দাবাদ থেকে সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মংলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
যেভাবে ঢুকবেন সুন্দরবনে:
দেশের যে কোন স্থান থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য প্রথমে মংলা যেতে হবে। মংলার অদূরেই রয়েছে বনবিভাগের ঢাংমারী ফরেস্ট স্টেশন। এখান থেকেই পর্যটকদের সুন্দরবনের প্রবেশের আনুষাঙ্গিকতা সারতে হয়। বনবিভাগের এই অফিসে দেশী পর্যটকদের ৫০ টাকা এবং বিদেশীদের জন্য ৭০০ টাকা দিয়ে বন পরিদর্শনের অনুমতি নিতে হয়। এর বাইরে লঞ্চ প্রতি ২ হাজার ৫শ’ টাকা (বড় সাইজ) এবং ভিডিও ক্যামেরা প্রতি ১শ’ টাকা রাজস্ব প্রদান করতে হয়।
0 Comments